News Details

...
ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিলো

Tuesday, 16 May 2023

৭০’র দশকের একটি জনপ্রিয় ছবি হচ্ছে ‘শেষ পর্যন্ত’। আর সে ছবিতে মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীর জনপ্রিয় একটি গান হচ্ছে ‘লক্কর ঝক্কর লক্কর মার্কা চলে তুফান মেইল’। সম্প্রতি ঢাকা-নেত্রকোনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা সে সময়ের গানটির কথা স্মরণ করিয়ে দিলো। রবীন্দ্রনাথের কথা অনুসারে ‘মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ’ হলেও কিছু কিছু পরিবহন ব্যবসায়ীর কথা বিশ্বাস করলে নিশ্চিত পাপ হবে। তবে যাই হোক, শূন্যের হতাশা থেকে সমাপ্তির সফলতা বেশি হলে শূন্যতা তখন পূর্ণতায় মিলিয়ে যায়।

মানারাত ইন্টারন্যাশন্যাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগ। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা মিলিয়ে একটি ছোট কিন্তু প্রাণবন্ত সুখী পরিবার। বলা যায়, মানারাতের প্রাণ। এখানে একাডেমিক পড়াশোনাই মুখ্য নয়। তাত্ত্বিক পড়াশোনার সঙ্গে আড্ডা, গল্প, খাওয়া-দাওয়া, ফটোগ্রাফি, ট্যুর, আউটডোর শুটিং, মিডিয়া হাউজ ভিজিট প্রভৃতি একে অপরের পরিপূরক হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি সেমিস্টারে একটি ট্যুর হবে না-এ বিভাগের সঙ্গে তা একদমই যায় না।

আসলে আমরা কেবল ভ্রমণই করি না, বইয়ের একেকটি পৃষ্ঠাকে অধ্যয়ন করি। সেন্ট অগাস্টাইন যেমনটি বলেছেন, ‘পুরো পৃথিবী একটি বই এবং যারা ভ্রমণ করে না তারা কেবল এর একটি পৃষ্ঠা পড়ে।’

গত ১৫ই নভেম্বর মধ্যরাত। একঝাঁক প্রাণোচ্ছ্বল শিক্ষার্থী সঙ্গে উদ্যমী শিক্ষকবৃন্দ। সবাইকে নিয়ে অগত্যা বাধ্য হয়ে রাজধানীর মিরপুর-১ থেকে ‘আল্লাহর রহমত’ নামক সেই তুফান মেইল বাসযোগে আমরা রওনা দিলাম নেত্রকোনার উদ্দেশ্যে। আক্ষরিক অর্থেই ‘ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিলো’। আমরা নিরতিশয় ভদ্র মি. ও মিস. শিক্ষকবৃন্দ রোবটিক স্টাইলে আড়ষ্ট হয়ে বসে থাকা ছাড়া গত্যন্তর ছিল না। সুরো-বেসুরো গান গেয়ে, আড্ডা দিয়ে, সেøাগান, আনন্দ মিছিল সহযোগে আসর জমানো ছাড়া শিক্ষার্থীদেরও কোনো উপায় ছিল না। এভাবে করতে করতে তুফান মেইলটি সকাল ৭টা নাগাদ পৌঁছায় গন্তব্যে। নেত্রকোনার ওয়াইএমসিএ রিসোর্ট।

রিসোর্টটির একটু বর্ণনা না দিলে ভ্রমণের হক আদায় হবে না। দোতলা বিশিষ্ট রিসোর্টটির সামনে রয়েছে বিশাল মাঠ, গাছপালা, নানা রঙের বাহারি ফুল। ভ্রমণের ক্লান্তি-শ্রান্তি সব নিমিষেই উধাও! বিশ্রাম, আড্ডা শেষে সকাল ১০টা নাগাদ দুর্গাপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা। সোমেশ্বরী নদীর এপাড়-ওপাড় পারাপারের একমাত্র বাহন নৌকা। নৌকা ভাড়াও অবিশ্বাস্য রকম কম। মাত্র ৫ টাকা আসা-যাওয়া। তবে আপনাকে অবশ্যই মোটরসাইকেল, আর মানুষের সঙ্গে গাদাগাদি করে ইলিশ ফাইল হয়ে পার হতে হবে।

নদী পার হয়ে পাড়ে ওঠামাত্র চোখে পড়লো দুর্গাপুর বাজার। সেখানে রয়েছে দৈত্যসম শতবর্ষী কড়াই গাছ। গাছের নিচে কাঁচা ধানের বিশাল স্তূপ। হরদম চলছে বিকিকিনি। এ এক গতিময় জীবনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। দুর্গাপুর বাজার থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশাযোগে সবাই ছুটে চললাম বিজয়পুর বিজিবি ক্যাম্পের দিকে। কক্সবাজারে চাঁন্দের গাড়িতে করে হিমছড়ি যেতে যেমন অপরূপ নয়নাভিরাম নান্দনিক দৃশ্য চোখে পড়ে, ঠিক এখানেও তেমন। একদিকে শিরদাঁড়া পাহাড়, সারি সারি গাছ, বাহারি ফুলের সমাহার, মাঠে সোনালী ধান, অপরদিকে সোমেশ্বরী নদী। স্রষ্টার তুলিতে আঁকা অপরূপ সৃষ্টিবৈচিত্র্য। 

বিজিবি ক্যাম্পের পাশ দিয়ে সবাই নেমে পড়লাম সোমেশ্বরী নদীর বর্ণচোরা পানিতে। কক্সবাজারের ইনানী, কলাতলী বিচের পানি যদি হয় সোমেশ্বরী নদীর দুর্গাপুর পয়েন্টের পানি, বিজিবি ক্যাম্পের দিকের নদীর পানির সঙ্গে তুলনা চলে সেন্ট মার্টিনের পানির সঙ্গে। আশৈশব গ্রামে কাটানো, নদী, খাল-বিল, পুকুরে দাপিয়ে বেড়ানো ছেলেগুলো যে যার মতো নেমে পড়লো নদীর পানিতে। রেহানা সুলতানা ম্যাডামের নেতৃতে মেয়েরা চলে গেল নৌ-বিহারে। সাঁতার কাটা, ফুটবল নিয়ে দাপাদাপি, ছোটাছুটি, জলকেলি- সব মিলিয়ে দেড় ঘণ্টার আনন্দ-জলস্নান। এখান থেকে ছুটে চললাম বিজয়পুর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের দিকে। সীমান্তের শূন্যরেখার ছবি, বিজিবি’র ছাউনির পাশে বড় প্রাঙ্গণে গল্প-আড্ডা, ফটোগ্রাফি। এই তো ভ্রমণানন্দ!

অবশেষে উল্টো রথে বিরিসিরির চীনামাটির পাহাড়। এটির আরেক নাম সাদা মাটির পাহাড়। পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে বয়ে চলেছে অসম্ভব সুন্দর পানির হ্রদ। মনোহরিণী হ্রদ-পাহাড়ের মিশ্রণ, পানির অপরূপ সৌন্দর্য-এটাই যেন নেত্রকোনার মূল ভ্রমণ আকর্ষণ। ঠিক এখানেই যেন ‘উদ্যানলতা বনলতার নিকট পরাজিত হইলো।’ হ্রদের পাশে রয়েছে ফুটবল মাঠ। চির প্রতিদ্বন্দী আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল দলের প্রতীকী ফাইনাল খেলায় আর্জেন্টিনা ব্রাজিলের জালে দুটি গোল ঢুকিয়ে দেয়।

সূর্য ওঠে, সূর্য ডোবে। বেলা শেষ হয়। গোধূলী নামে। পাখিরা নীড়ে ফিরে যায়। তবে শেষ হতে হতেও হয় না ভাবি গণমাধ্যম কর্মীদের কোলাহল। ওয়াইএমসিএ মাঠ প্রাঙ্গণে রাত ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা সঙ্গে জম্পেস খাওয়া-দাওয়া। অনুষ্ঠানের মধ্যমণি ওবায়দুল্লাহ তারেক। খালি গলার দারাজ কণ্ঠের জাদুকর খ্যাতনামা সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও সুরকার। মানারাতের সাংবাদিকতা বিভাগের অ্যাডজাংকট ফ্যাকাল্টির ওবায়দুল্লাহ তারেক। সংগীতের মূর্ছনা আর কথার জাদু। ৩৬০০টি সেকেন্ডের প্রতিটি মুহূর্তে বুঁদ হয়ে ছিল ট্যুরে আগত সবাই!

একটি মুদ্রার দুটি পিঠ। আলো-আঁধার যেমন। রাতের আঁধার সুন্দর তখনই, যখন সমপরিমাণ দিনের আলো পাওয়া যায়। ঘোরাঘুরির সুবাদে অনেকগুলো জেলা ভ্রমণের সুযোগ হয়েছে। তবে নেত্রকোনার মতো এত অনুন্নত, পিছিয়ে পড়া জেলা একটিও চোখে পড়েনি। সোমেশ্বরী নদীর বালি, পাথর দিয়ে ঢাকার নগর সভ্যতা তৈরি হয়, কিন্তু নদী দু’পাড়ের মানুষের জীর্ণশীর্ণ অবস্থা অপরিবর্তিত রয়ে যায়। নেত্রকোনা জেলার ফসল, মাছ দিয়ে নগরের নাগরিকরা উদরপূর্তি করে। অথচ এ জেলার সিংহভাগ মানুষ প্রজার মতোই বেঁচে আছে। কিন্তু কেন? এ কেন প্রশ্নের উত্তরে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কথার সূত্র ধরে বলতে হয়, ‘আমাদের ইশ্বরের প্রতিনিধিরা থাকেন ভদ্রপল্লীতে, গুলশান, বনানী, বেগমপাড়ায়; নেত্রকোনায় তাহাদেরকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।’


মো. মামুন উদ্দীন

সহকারী অধ্যাপক

ডিপার্টমেন্ট অব জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি


Department Office
Ashulia Model Town
Khagan, Ashulia
Dhaka
Phone: 09666911624, 09666911625, 09666911626, 09666911627
Mobile: 01819245895, 01780364415
Fax: +88-02-55059924
Admission Office
Plot # CEN-16, Road # 106
Gulshan 2, Dhaka-1212
Bangladesh
Phone: +88-02-55060025,
9862251
Mobile: 01780364414-15
01709126394
Fax: +88-02-55059924
Email: admission@manarat.ac.bd
Website: www.admission.manarat.ac.bd
Gulshan Campus
Plot # CEN-16, Road # 106
Gulshan 2, Dhaka-1212
Bangladesh
Phone: +88-02-55060025,
9862251, 58817525
Mobile: 01780364414
Fax: +88-02-55059924
Ashulia Campus
Ashulia Model Town
Khagan, Ashulia
Dhaka
Phone: 09666911624, 09666911625, 09666911626, 09666911627
Mobile: 01819245895, 01780364415
Fax: +88-02-55059924